Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

পুষ্টি চাহিদা পূরণ ও পরিবেশ সুরক্ষায় ফল গাছ রোপণ

(জাতীয় ফলদ বৃক্ষ রোপণ পক্ষ-২০১৯ উপলক্ষ্যে কৃষি তথ্য সার্ভিস কর্তৃক আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় ‘ক’ গ্রুপে প্রথম স্থান অধিকারী)

প্রারম্ভিকা : বন্ধু একটু দাঁড়া
    এই শহরে বুনে দে আজ
    ফলদ গাছের চারা।
    পুষ্টি ঘাটতি দূর হবে,
    জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে
    রক্ষা পাবে ধরা।’
অফুরন্ত সৌন্দর্যের এক মধুর নিকুঞ্জ আমাদের এই পৃথিবী। এই ধরাকে হাজারো কবির কবিতার রূপসী উপমা, প্রেমিকের প্রেমপত্র, বোবার দুর্বোধ্য ভাষা, কথকের মুক্ত মঞ্চ করে তুলেছে প্রাণপ্রদায়ী বৃক্ষরাজি, কখনো ফুল গাছ, ঔষধি গাছ, কখনো ফলজ গাছ হিসেবে। ফলদ গাছসমূহ পরিবেশকে যেমন সুশীতল করে তেমনি মানুষের তৃষ্ণা মেটায়, কখনো মনের তৃষ্ণা, কখনো মুখের তৃষ্ণা। ফলদ গাছ পুষ্টিমান নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি, ইহা পরিবেশ গঠনে ও সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন-ফল ভিটামিন ও মিনারেলের বৃহৎ জোগানদাতা। ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হৃদরোগ ও অঙ্গপ্রতঙ্গের প্রদাহ কমাতে ফল কার্যকরী। আবার, অক্সিজেন সরবরাহসহ পরিবেশ রক্ষার বিভিন্ন কাজেও ফলদ গাছ অন্যান্য গাছের মতো সচলভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে। ফলজ গাছ অন্যান্য গাছের তুলনায় বেশি জরুরি কারণ, এটি একদিকে পুষ্টি চাহিদা পূরণ ও অন্যদিকে পরিবেশ সুরক্ষিত রাখে। তাই ফলগাছ রোপণ অতীব জরুরি।
ফলগাছের পরিচিতি : বাংলাদেশে ফল উৎপাদন মৌসুমভিত্তিক। অধিকাংশ ফল উৎপাদন হয় মধু মাসে। বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ মাসে মোট ফল উৎপাদনের ৫৪ ভাগই উৎপাদিত হয়।  বাকি শতকরা ৪৬ ভাগ উৎপাদন হয় অবশিষ্ট ৮ মাসে। মধু মাসে আম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস বেশি ফলন হয়। আম আমাদের জাতীয় গাছ। আমাদের দেশে ৮৩ প্রজাতির ফল গাছ রোপণ করা হয় ফলন বিবেচনায়। পেয়ারাসহ কিছু ফলের উৎপাদনস্থল ও পুষ্টি উপাদান নি¤েœর ছকে দেয়া হয়েছে।
ফলের উপকারিতা ও পুষ্টিমান নিশ্চিতকরণে ফলগাছ রোপণের গুরুত্ব : বাংলাদেশের আবহাওয়া গ্রীষ্ম ও অবগ্রীষ্ম ম-লীয় যা ফল গাছ রোপণে অত্যন্ত উপযোগী। কিন্তু বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ফল চাষ বর্তমানে একজন পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক ফলের চাহিদা ২০০ গ্রাম বিপরীতে  এর প্রাপ্যতা হলো মাত্র ৭৪.৪২ গ্রাম। (তথ্য সূত্র : কৃষি তথ্য সার্ভিস)। ‘বাংলাদেশে ১.৩৭ লাখ হেক্টর জমি থেকে প্রায় ৪৩.৪৭ লাখ মেট্রিক টন ফল উৎপাদিত হয় যা আমাদের চাহিদার মাত্র ৩৭.২২% পূরণ করতে পারে।’ (বিবিএস-২০১২)। এমতাবস্থায়, ফলের গাছ অধিক হারে লাগানো দরকার।        ‘বৃক্ষ নেই,
    প্রাণের অস্তিত্ব নেই,
    বৃক্ষহীন পৃথিবী যেন প্রাণহীন মহাশ্মশান।’
পরিবেশ রক্ষায় ফল গাছ অন্যান্য গাছের মতোই ভূমিকা রাখে। মাটি উর্বর করে, বৃষ্টির পরিমাণ বাড়ায়, পরিবেশের রঙ ও সৌন্দর্য বাড়ায়। তাই ফল গাছ লাগানো উচিত এতে ফলের চাহিদা মিটবে, অন্যদিকে পরিবেশও স্বচ্ছ থাকবে, সুরক্ষিত থাকবে।
হাদিসে বলা হয়েছে,
‘কোনো মুসলমান যদি একটি গাছ লাগান এবং তা থেকে কোনো ফল মানুষ বা পশু ভক্ষণ করে, তবে তা উৎপাদনকারীর জন্য সাদকাহ স্বরূপ গণ্য হবে।’ (সহিহ বুখারী)
পুষ্টি চাহিদা পূরণে ফল : ‘ফল শরীরের জন্য ভালো’- এমনটাই বলেছেন হার্ভার্ড স্কুল পাবলিক হেলথের একদল গবেষক বহু অনুসন্ধান করে। তারা দেখেন যে, আপেল, আঙুর, ব্লুবেরি      প্রভৃতি ফল বিশেষভাবে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ২৯ আগস্ট, ২০১৩ তারিখে প্রকাশিত ‘ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী-
১. ফলে আছে ভিটামিন, খনিজ লবণ, মিনারেল, আঁশ ও কিছু ফাইটোকেমিক্যাল এগুলো রক্তচাপ ও কোলস্টেরল কমায়। পাশাপাশি এসব উপাদান ক্যান্সার, হৃদরোগ, অঙ্গপ্রতঙ্গের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
২. ফলে প্রচুর অ্যান্টি-অ্যক্সিডেন্ট থাকে। চিনি অত্যন্ত ৩৫ শতাংশ কম থাকে ফলে তাই এর উপকারিতা বেশি।
৩. চিনি খাওয়ার সঙ্গে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার কোনো সম্পর্ক না থাকলেও আঁশযুক্ত ফল খেলে শে^তসার-শর্করা পরিপাকতন্ত্রের মধ্য দিয়ে ধীরে অতিক্রম করে। তাই ফলে গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের পরিমাণ বেশি হয় না।
৪. ফলে একই সাথে খনিজ পদার্থ, বিভিন্ন ভিটামিন, পিগমেন্ট কাজ করে। ফলে একই সাথে প্রায় সবগুলো উপাদান কমবেশি পরিমাণে হলেও উপস্থিত থাকে। (সূত্র : প্রথম আলো)।
ফলের উপকারিতা অপরিসীম। ফল আমাদের পুষ্টি চাহিদা মেটায়। তাই আমাদের পুষ্টিচাহিদা মেটাতে ফলের উৎপাদন বাড়ানো দরকার আর এজন্য ফলগাছ রোপণ জরুরি।
পরিবেশের সুরক্ষায় ফলগাছ : অন্যান্য গাছের মতো ফলগাছও পরিবেশের প্রাণরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন-
মাটিকে মজবুত ও দৃঢ় করে, মাটির ক্ষয়রোধ করে, পরিবেশে অক্সিজেন সরবরাহ করে, অতি বিষাক্ত গ্যাস ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড পরিবেশ থেকে শোষণ করে পরিবেশকে বিশুদ্ধ রাখে, খরার প্রবণতা কমায়, বৃষ্টির পরিমাণ বাড়ায়, পরিবেশের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে ফলে, অতিরিক্ত তাপ অনুভব হয় না, পরিবেশকে সুশীতল রাখে, বাতাসে জলীয় বাষ্পের ক্ষমতা বাড়ায়, দেশের আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করে ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে, পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে এবং পানি স্ফীতির হাত থেকে রক্ষা করে, পরিবেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করে।
ফলের গাছ আমাদের পরিবেশকে সাজাতে সাহায্য করে। এরাই মানুষের জীবনকে মৃত্যুঞ্জয়ী মহিমায় বিকশিত হতে সাহায্য করেছিল। এক কথায়, ফলের গাছ বিদীর্ণ শঙ্কাতুর পৃথিবীর পরিবেশকে যেমন রক্ষা করছে তেমনি পুষ্টি উপাদান অর্থাৎ,   ভিটামিন, মিনারেল, শর্করা, আমিষ ইত্যাদির এক বিরাট অংশ হিসেবে কাজ করছে। তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন :
‘দাও ফিরিয়ে অরণ্য
লও এ নগর।’
সরকারি তথ্য মতে, ‘বাংলাদেশে ১৭% বনভূমি আছে, বিপরীতে ২৫% বনভূমি থাকা দরকার।’ যদি ফলের চারা রোপণ বাড়ানো যায় তাহলে, বনাঞ্চলের পরিমাণও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাবে। (সূত্র : বাংলাপিডিয়া)
বিজ্ঞানীদের মতে, ‘যদি তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসও বেড়ে যায়, তাহলে বাংলাদেশের প্রায় ১৭% অঞ্চল (ভূমি) সমুদ্রতলে ডুবে যাবে।’ তাই পরিবেশের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ফলদ গাছ অন্যান্য গাছের সাথে বা কিছু গাছের বিকল্প হিসেবে লাগানো যেতে পারে। (সূত্র : নফহবংি ২৪) কৃষিকথা (অওঝ)
‘প্রতি বছর গড়ে নদীভাঙনে ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়।’ (সূত্র : অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১২) যেসব অঞ্চলে নদীভাঙন ঘটে (৪০টি নদ- নদীতে) সেখানে অন্যান্য গাছের পরিবর্তে নদীর পাড়ে ফলগাছ লাগানো হলে একদিকে যেমন নদীর পাড়গুলো দৃঢ় হবে মাটি ক্ষয় রোধ পাবে, অন্যদিকে নদীতীরবর্তী অঞ্চলসমূহের মানুষের পুষ্টি চাহিদাও মিটাবে।
সার্বিকভাবে, ফলগাছ ‘পরিবেশ’-এর জন্য কল্যাণপ্রার্থী। তাই, এর কল্যাণ বৃদ্ধিতে এর রোপণ বৃদ্ধি করা জরুরি।
ফলগাছ রোপণ : কৃষি প্রধান বাংলাদেশে ফলের বাহারে বাংলার ভুবন মাতোয়ারা হলেও ফলের চাষ পর্যাপ্ত নয়। তাই ফলগাছ রোপণ বাড়ানো উচিত। বাংলাদেশে বিভিন্ন ফলগাছ চাষের শতকরা আবাদি জমির পরিমাণ কলা ৩২%, আনারস ৯%, কাঁঠাল ৮%, তরমুজ ৭%, আম ২৫%, পেয়ারা ২% ও অন্যান্য ফল ১৭%। (তথ্য সূত্র : বণিক বার্তা, ৩ এপ্রিল ২০১৮)।
এই ফল চারা রোপণে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তবে সব প্রতিবন্ধকতা প্রতিহত করে ফলগাছ রোপণ বাড়াতে হবে। কারণ আমাদের বেঁচে থাকার অন্যতম অন্যান্য উপাদানগুলোর মধ্যে   সুরক্ষিত পরিবেশ একটি যা রক্ষায় ফলগাছ অসামান্য অবদান রাখে। যেমন:
* ঞৎবব চবড়ঢ়ষব ড়ৎম-এর মতে ১ একর পরিপক্ব ফলগাছ, ২৬০০০ মাইলের মধ্যে উৎপন্ন ঈঙ২কে শোষণ করতে পারে।
* ‘৫ হেক্টর পরিমাণ বনভূমি থাকলে এলাকার ৩-৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা কমে যায়, ভূমি ক্ষয় রোধ এবং বাতাসে আর্দ্রতা বাড়ায়। বৃক্ষরাজি ৮৫-৯০% শব্দ শোষণ করতে পারে।’ বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন ব্যাপকহারে বাড়ছে ও এর ফলে বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ বিশে^ ১২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এজন্য ফলগাছ রোপণ বাড়ানো উচিত। (কৃষিকথা, আষাঢ় ১৪২৪)
ফলগাছ রোপণ বৃদ্ধিতে যা করণীয় :
১. সর্বসাধারণকে ফলের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানানো;
২. ফলগাছ এর উপকারিতা তুলে ধরা;
৩. সচেতনতা বৃদ্ধি করা ও গণমাধ্যমগুলোর এর গুরুত্ব প্রচারণা বাড়ানো;
৪. অনাবাদি বা আবাদি জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার কীভাবে করা যায় তা সাধারণ মানুষকে বোঝানো।
৫. সরকারি নানা পদক্ষেপ ও কর্মসূচির আয়োজন করা।
৬. ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ফলগাছ রোপণের প্রয়োজনীয়তা প্রচার।
৭. ‘ফলের চারা রোপণ করুন, পুষ্টির অভাব দূর করুন’-এর মতো স্লোগান জনগণের বিশ^াসে পরিণত করা।
এভাবে ফলগাছ রোপণ বাড়িয়ে আমরা নিজেদের প্রাণের অস্তিত্বকে বসুধার মাঝ থেকে লুটিয়ে পৃথিবীকে নবরূপে সাজিয়ে তুলতে সক্ষম হবো।
উপসংহার : বিশ^রাজালয়ে বিশ^বীণা এখন আর বনে-উপবনে নিত্য সঙ্গীত মধুরিমা ছড়াতে পারে না কারণ পল্লবিত, মঞ্জুরিত গাছের খোঁজ পাওয়াই তো বিরল। আবার এই দৃশ্য ফেরাতে বৃক্ষরাজির সমারোহ যেমন বাড়ানো উচিত, তেমনি নতুন দৃশ্যের সংযোজন ঘটাতে অর্থাৎ, বিপর্যয়গ্রস্ত পরিবেশকে বাঁচাতে ও পুষ্টিসমৃদ্ধ জাতি গঠনে ফলগাছ রোপণ অতি জরুরি। ফলগাছ একসাথে পরিবেশ সুরক্ষায় যেমন নিবেদিত প্রাণ, তেমনি পুষ্টিচাহিদা পূরণেও এরা আমাদের অন্যতম ভরসাস্থল। তাই ফল গাছ রোপণে আমাদের সচেতন হতে হবে। আমাদের কামনা, আণবিক বোমার বিদীর্ণ শঙ্কাতুর পৃথিবীতে একদিন মানুষের জীবনে ফলগাছ রোপণ বৃদ্ধির চেতনায় আসবে প্রাণের বন্যা, সৌন্দর্য ও সুষমা। সবশেষে চেতনায় উজ্জীবিত রাখতে চাই,
‘মরু বিজয়ের কেতন উড়াও শূন্যে হে প্রবল প্রাণ
ধূলিরে ধন্য করো করুণার পুণ্যে হে কোমল প্রাণ’।

তাসনীম তিশা

দশম শ্রেণী, শহীদ আব্দুর রব সেরেনিয়াবাত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বরিশাল, মোবাইল : ০১৭২০২০১৬২৯


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon